প্রকাশিত: Sun, Mar 5, 2023 4:28 PM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 3:30 AM

চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দেবে কে?

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল : কিছু কিছু জায়গাকে আমরা পবিত্র ও নিরাপদ মনে করি। যেমন মায়ের কোল। সন্তান যখন মায়ের কোলে থেকে গুলিবিদ্ধ হয়  তখন আমাদের পৃথিবী দুলে ওঠে। আমরা বুঝে নিই এখানে আমাদের আর কোনো নিরাপত্তা নেই। শিশুটি অসুখে মারা গেলেও আমরা হয়তো এতোটা অসহায় বোধ করতাম না। 

জেল হাজতে একজন কয়েদির মৃত্যুও আমাদের বিচলিত করে। আমরা মনে করি, পুলিশি হেফাজত হলো নিরাপদ স্থান। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে কেউ যদি মারা যায় আমরা ধরে নিই এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। আমাদের অসহায়ত্ব তখন অনেক বেশি গাঢ় হয়ে ওঠে। একজন সার্জারির চিকিৎসক বা সার্জনের জন্য তার পবিত্রতম স্থান হলো অপারেশন থিয়েটার। একজন সার্জন হলেন সেই ছোট্ট ঘরের প্রধান ব্যক্তি। সেই রাজ্যের তিনিই সম্রাট। এখানে তার অনুমতি ব্যতীত কারও প্রবেশাধিকার নেই। সেই অপারশন থিয়েটারেই যদি একজন সার্জন একজন বহিরাগত দ্বারা প্রহৃত হন, তবে আমাদের জন্য নিরাপত্তা শব্দটি একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছু না৷পেশার  মর্যাদা তখন ধুলায় লুটানো আঁচলের মতোই অনাদৃত, অবহেলিত একটি বিষয়। 

দেশে চিকিৎসকের উপর যতো রকমের নিগ্রহ হয়েছে তার মধ্যে খুলনার ঘটনাটি সবচেয়ে করুন। খুলনার শেখ নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নিশাত আব্দুল্লাহকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে মারধোর করেছে পুলিশের একজন এস আই, যে সরকারি চাকরিতে তার চেয়ে কয়েক গ্রেড নিচের একজন কর্মকর্তা। আঘাতের কারণে ডা. নিশাত গুরুতর আহত হয়েছেন, জ্ঞান হারিয়েছেন। অভিযোগ ডাক্তার নিশাতের অপারেশনের কারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে তার রোগীর। যেকোনো চিকিৎসায় জটিলতা হতে পারে। কোনো চিকিৎসক শতভাগ সফলতার নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এ কারণে তাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পেটাতে হবে। এস আই একা নয়, সাথে নিয়ে এসেছিল তার আরো পুলিশ সদস্য। তার মানে এটি কোনো তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া নয়। এটি একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। তার চেয়ে বড় কথা প্রজাতন্ত্রের একজন সরকারি কর্মকর্তার ভয়াবহ ঔদ্ধতের পরিচয় পাওয়া যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার, শৃঙ্খলার অভাব লক্ষ্য করা যায়। 

এই ঘটনার পর পুলিশের এস আই গ্রেফতার হননি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি কোনো সান্ত্বনামূলক বিবৃতি দেননি, যা শুনে মনে হতে পারে যে এই ঔদ্ধত্যের কোনো সুরাহা সম্ভব বা কোনো সুবিচার সম্ভব। রাষ্ট্রের চিকিৎসকগণ আশঙ্কা করছেন এই ঘটনার কোনো সুবিচার হবে না। একজন ইউএনও আক্রান্ত হলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় এখানে তার ছিটেফোঁটাও নেই। এই রাষ্ট্রে পুলিশ এবং প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের ক্ষমতা সুসংহত করতে তাদের প্রয়োজন হয়। ডাক্তার এরকম কোনো কাজে লাগে না। ডাক্তারদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই। সে নিতান্ত নিরীহ নিরস্ত্র একজন নাগরিক। তার উপর সিভিল সোসাইটি। নিরীহর উপর নিরীহ। এই পরিস্থিতিতে তাদের হাতে আছে একটাই অস্ত্র তা হলো কর্মবিরতি। ডাক্তাররা কর্মবিরতিই দিয়েছে। তাতে সমস্যা হচ্ছে অনেক এবং এই সমস্যার দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।  প্রতিবাদ করলে ক্যাজুয়াল্টি হবে না, এটা তো আশা করা ঠিক না। না হলে সেটা প্রতিবাদও হয় না৷ রোগীরা কষ্ট পাবে। বিনা চিকিৎসায় মারাও যেতে পারে। কিন্তু ডাক্তারদের হাতে আর তো কিছু নেই। এই রাষ্ট্র তাকে কেয়ার করে না। এই পুলিশের দেশে তার তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

 লেখক: রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ